রাবির ছাত্রীকে অপহরণচেষ্টা’ গ্রেফতার ২

রাবির ছাত্রীকে অপহরণচেষ্টা’ গ্রেফতার ২

রাবি প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক ছাত্রীকে অপহরণের চেষ্টার অভিযোগে শিক্ষার্থীসহ দুজনকে আটক করেছে মতিহার থানা পুলিশ।

বুধবার (২৬ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বধ্যভূমি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বাদী হয়ে মতিহার থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭/৩০ ধারায় মামলা করেন। বৃহস্পতিবার দুজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন– জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান চৌধুরী (২৫) ও তার দুলাভাই রাশিকুল ইসলাম ওরফে পিন্টু (৩৮)। রায়হান বাগমারা উপজেলার মহব্বতপুর এলাকার গোলাম মোস্তফার ছেলে। রাশিকুল ইসলাম কাটাখালীর দালালপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তার বাবার নাম রজব আলী। ভুক্তভোগী ছাত্রীও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী।

ওই ছাত্রী জানান, বুধবার বেলা ১১টার দিকে হল থেকে রিকশায় করে বিভাগে যাচ্ছিলেন তিনি। দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনের সামনে যেতেই রায়হান জোরপূর্বক রিকশায় ওঠেন। তিনি রিকশাচালককে বধ্যভূমিতে নিয়ে যেতে বলেন। বধ্যভূমিতে যাওয়ার পর তিনি ওই ছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। রাজি না হওয়ায় রায়হান নিজের শরীরে কলম দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। ছাত্রী ফোন করে বিষয়টি রায়হানের বাবাকে জানালে তিনি অফিসে রয়েছেন বলে ফোন কেটে দেন।

কিছুক্ষণ পরে রায়হানের দুলাভাই এসে মীমাংসার কথা বলে দুজনকে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে যেতে চান। ওই ছাত্রী যেতে অস্বীকৃতি জানালে রায়হান তাকে মারধর করে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলতে চান। এ সময় ছাত্রীটি সাহায্যের জন্য চিৎকার করলে এক পথচারী বিষয়টি দেখতে পেয়ে মতিহার থানা পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ গিয়ে রায়হানসহ তার দুলাভাইকে আটক করে নিয়ে যায়।

রায়হানের ওই ছাত্রীর সঙ্গে কোনও ধরনের সম্পর্ক রয়েছে কিনা জানতে চাইলে ওই ছাত্রী বলেন, ‘আমার সঙ্গে তার কোনও বিশেষ সম্পর্ক নেই। বিভাগের বড় ভাই হিসেবে তার কাছ থেকে আমি নোট নিয়েছিলাম। আমি তাকে বড় ভাই হিসেবে দেখেছি। কিন্তু তিনি আমাকে অন্যভাবে দেখতেন।’

তবে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেয়েটির সঙ্গে রায়হানে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মেয়েটি হিন্দু এবং ছেলেটি মুসলিম হওয়ায় মেয়ের পরিবার সম্পর্কটি মেনে নেয়নি।

মেয়ের বাবা এসে বিষয়টি বিভাগের সভাপতিকে জানায়। কিন্তু এর পরেও রায়হানের সঙ্গে মেয়েটি ক্যাম্পাসে চলাফেরা করছে বলে জানিয়েছে বিভাগের শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ ঘটনার আগের দিন ক্যাম্পাসে এসে মেয়ের বাবা রায়হানের সঙ্গে দেখা করেন। এবং সম্পর্কের বিষয়টি ভুলে গিয়ে ক্যারিয়ারের দিকে নজর দিতে বলেন। রায়হানের সহপাঠীরা জানান, এর পর থেকে তাকে খুব বিমর্ষ দেখাচ্ছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শাহরিয়ার জামান বলেন, ‘রায়হানের সঙ্গে মেয়েটির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি জানার পর বেশ কিছুদিন আগে মেয়েটির বাবা আমার কাছে এসেছিলেন। মেয়েকে দেখেশুনে রাখতে বলেছিলেন। অবশ্য এর পরেও রায়হানের সঙ্গে মেয়েটি চলাফেরা করেছে। সর্বশেষ ঘটনার আগের দিন (মঙ্গলবার) মেয়ের বাবা আমার কাছে আসে এবং পরে ছেলেটির সঙ্গে দেখা করে কথা বলে।’

অপহরণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুনেছি অপহরণের চেষ্টাকালে রায়হান এবং তার এক আত্মীয়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।’ এর সঙ্গে বিভাগের কোনও সম্পর্ক নেই বলেও জানান তিনি।

মতিহার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘অপহরণকালে দুই জনকে আটক করে মতিহার থানা পুলিশ। ওইদিনই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭/৩০ ধারায় মামলা দায়ের করেন। আটকদের গ্রেফতার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হয়েছে।

মতিহার বার্তা ডট কম-২৮ জুন ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply